ETIQUETTES: ব্যবহারেই তোমার পরিচয়!

বলতে পারো আমরা মানুষকে সবচেয়ে বেশি কী দিয়ে মূল্যায়ন করি? অনেকেই বলবে সাফল্য কিংবা তার কর্ম। কিন্তু আমার মনে হয় কাউকে মূল্যায়ন করতে হলে তা তার ব্যবহার দিয়ে করা উচিত। কঠোর পরিশ্রম দ্বারা খুব সহজেই সাফল্য অর্জন করা যায় এবং তার জন্য মানুষের বাহবা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু পরক্ষণেই তার কথা ভুলে যেতে পারে মানুষ।
কিন্তু কারো ব্যবহারে মুগ্ধ হলে তার কথা কখনই ভোলা সম্ভব নয়। ভদ্রতা দেখানো কখনোই সেকেলে কোন বিষয় নয়। ভদ্রতা বোঝায় তুমি কতটা শ্রদ্ধাশীল এবং অন্যের প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল। জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায় শুধু ভালো ব্যবহার দ্বারা। এছাড়াও ভালো ব্যবহার প্রকাশ করে তুমি অন্যের ধর্ম, সংস্কৃতি কিংবা ঐতিহ্যকে কতটা সম্মান করছো।
ভদ্রতা শেখার না কোন নির্দিষ্ট বয়স রয়েছে, না রয়েছে নির্দিষ্ট সময়। চলো আজ দেখে নেই প্রতিদিনের চলাফেরায় আমরা কীভাবে ভদ্রতার পরিচয় দিতে পারি:

১। ভদ্রতা দেখাও মোবাইল ফোনে:
মোবাইল ফোনে ভদ্রতা কীভাবে দেখানো যায় তা হয়ত আমরা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারি নি। ধরো, তুমি কোন পাব্লিক প্লেসে আছো। হতে পারে বাস, অফিস বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
তুমি অবশ্যই চাইবে না কথা বলার সময় সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকুক কিংবা তোমার ব্যক্তিগত কথা সবাই শুনে ফেলুক। সে ক্ষেত্রে এসব স্থানে ফোনে কথা না বলাই ভালো। যদি বলতেই হয়, তবে গলার স্বরের দিকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে অন্যরা বিব্রতবোধ না করে।
ফোনে কথা বলার মাঝখানে অন্য কোন দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে কথা না বলাই ভালো। তা না হলে ফোনের অপর দিকে যে বসে আছে সে দ্বিধান্বিত হবে কথাগুলো তাকে বলা হচ্ছে কিনা কিংবা তার কথা ঠিকমতো শোনা হচ্ছে কিনা।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে পারতপক্ষে ফোন ব্যবহার করা উচিত না। মনে রেখো সেই সময় আর কখনো ফিরে আসবে না। যারা কাছে আছে তাদের সঙ্গে কথা বলো, সময়টাকে উপভোগ করো।
খুব জরুরী কোন পরিস্থিতি ছাড়া কাউকে খুব সকাল কিংবা রাত ১০ টার পর ফোন দেয়াটা শোভন নয়। অনেকেই এতে খুব বিরক্ত বোধ করে। এসব ক্ষেত্রে যাকে ফোন দেবে তার সাথে তোমার সম্পর্ক বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।
যদি কখনো ভুল নম্বরে কল চলে যায় তবে খুব নরম স্বরে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে কিংবা মাঝে মাঝে ভুল নম্বর থেকে কল আসলেও তাকে জিনিসটি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।
কথা বলার সময় গলার স্বরের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবসময়। যার সাথে কথা বলছো হয়ত তখন তোমার স্বরই তোমার মুখের অভিব্যক্তি, ব্যক্তিত্ব,ভদ্রতা প্রকাশ করছে। সুতরাং কথা বলার সময় স্বরের দিকে লক্ষ্য রাখা খুব জরুরী।
ফোন ধরে প্রথমেই নিজের পরিচয় দিয়ে নাও তারপর সাক্ষাৎ বিনিময় করো। অপর দিকে যে থাকে তারও খুব ভালো লাগবে। কাউকে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখা অনুচিত, এতে সে মানুষটি বিরক্তবোধ করে।
২। ধন্যবাদ দিতে শিখো:
ধন্যবাদ শব্দটি ছোট কিন্তু মহত্ত্ব খুব বড়। অনেক সময় আমরা কাছের মানুষের সাহায্য করাটা খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়ে নেই এবং তাকে ধন্যবাদ দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না। সেখানেই আমরা ভুল করি। ছোট একটা ধন্যবাদ মানুষকে অনেক খুশি করে দিতে পারে। বাসায় তোমাকে যারা কাজে সাহায্য করছে তাকেও ধন্যবাদ জানাও। এতে তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। কেউ তোমাকে উপহার দিলে কিংবা তোমার জন্য কোন কিছু করলে তাকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে ভুলবে না।
৩। ভদ্রতা দেখাও সময়নিষ্ঠায়:
সময়নিষ্ঠাও এক ধরনের ভদ্রতা। অনেকেই ৫ মিনিট বিলম্ব হওয়াকে তেমন বড় কিছু মনে করে না। হয়ত তুমি যাকে অপেক্ষা করাচ্ছো সে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখে এসেছে। তার কাছে কিন্তু সেই ৫ মিনিটও খুব মূল্যবান।
অফিসের কোন মিটিং, ক্লাসে সময়মত পৌঁছানো, কোন অনুষ্ঠানে সময় মত উপস্থিত হওয়াও ভদ্রতার সামিল। তুমি যদি অন্য কাজে আটকা পরে যাও তবে আগ থেকেই জানিয়ে দাও তোমার বিলম্ব হওয়ার কারণ। এটিও কিন্তু এক প্রকার ভদ্রতা।
৪। পোশাকে দাও ভদ্রতার পরিচয়:
সব জায়গায় যে সব পোশাক মানায় না, এটা প্রায়ই আমরা ভুলে যাই। চাকরির ইন্টারভিউতেও এখন পোশাককে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। সেই প্রাধান্য কিন্তু মূল্যের দিক দিয়ে নয় বরং তা কতটুকু ভদ্রতা প্রকাশ করে তা দিয়ে।
আমরা যখন প্রথমবার কারও সাথে দেখা করি প্রথমেই কিন্তু তার পোশাক লক্ষ্য করি। যে জায়গায় যে পোশাক মানায় সেখানে তেমনই পরার চেষ্টা করা উচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে যে পোশাক পরছো সেটি যেন সেই নির্দিষ্ট জায়গার জন্য বেমানান না হয়।


৫। যত পারো সাহায্য করো:
আমরা নিজের কাজে এখন এত ব্যস্ত থাকি যে অন্যকে সাহায্য করতে ভুলে যাই। আমাদের আশেপাশে কোন বৃদ্ধ মানুষ দেখলে এগিয়ে গিয়ে তাকে সাহায্যের কথা জিজ্ঞেস করা একটি সাধারণ ভদ্রতা। মাকে রান্নাঘরে কাজ করতে দেখলে, কারও কোন কাজে সাহায্য লাগলে এগিয়ে যাও।
৬। সাধারণ কিছু ভদ্রতা:
পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা একরকম অভদ্রতা। কিন্তু এখন আমরা এসবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। যে ধূমপান করছে তার প্রতি সম্মান কিছুটা হলেও কমে যাচ্ছে।
যদি অনেকে একসাথে খেতে বসো তাহলে অন্যদের খাবার আগে দিতে সাহায্য করো। তারপর একসাথেই খেতে শুরু করো।
বাসে কিংবা অন্য কোন জায়গায় যদি দেখো তোমার চেয়ে বয়সে বড় কেউ দাঁড়িয়ে আছে তবে তাকে বসার সুযোগ দাও।
সবাইকে শ্রদ্ধা করো। বাস ড্রাইভার কিংবা রিকশাচালক তাদের সাথে কিছু টাকার জন্য ঝগড়া করাটা উচিত নয়। তারাই কিন্তু তোমার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী।
অপরিচিত কাউকে কখনও এমন কোন প্রশ্ন করো না যা তাকে অপ্রস্তুত করে দেয় যেমন: তার ব্যক্তিগত জীবন, বেতন ইত্যাদি।
আমাদের একটি বড় ভুল হল আমরা অনেকেই কাউকে তার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করি না। মনে রেখো, সেই হয়ত একদিন তোমাকে কোন কাজে সাহায্য করতে পারে।
অনেক সময় আমরা পরিচিত মানুষকে দেখেও কথা বলতে এগোই না। ভাবি, সেই আগে এসে কথা বলবে। এভাবে দুই দিক থেকেই কিন্তু পরিচয়টা এগোয় না। অনেকেই এমন আচরণকে অহংকার বলে মনে করে, আসল বিষয় যদি তা নাও হয়। সাধারণ ভদ্রতা হচ্ছে দুইজনই এসে কথা বলা।
অন্যের ব্যর্থতায় অনেকেই আমরা খুশি হয়ে যাই। এমনটা কখনোই ঠিক না। মনে রাখা উচিত, এমন ব্যর্থতা একদিন আমার জীবনেও আসতে পারে।
কখনো কারও পোশাক নিয়ে মন্তব্য করাটা শোভন নয়।
ভালো ব্যবহার শিখতে হলে অর্থ কিংবা কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন তা হল, মনের ইচ্ছা। ভালো ব্যবহার কাউকে দেখানোর জন্য নয় বরং নিজের মনের সন্তুষ্টির জন্যই শুরু করে দেয়া উচিত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Amazing Historical place Godkhali, Jhikargacha, Jessore

HISTORY OF KHULNA

এয়ারটেল সিমে ফ্রিতে নিয়েনিন ১ জিবি ৪ জি ইন্টারনেট।